মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও ধনকুবের ইলন মাস্কের মহাকাশ পরিবহন প্রতিষ্ঠাণ স্পেসএক্সক পরিচালিত স্টারলিংক কে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ইন্টারনেট সেবা ব্যবসায় কিছুটা প্রতিযোগিতা তৈরি করতে পারে।
স্যাটালাইট ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান STARLINK ৬০ টিরও বেশি দেশে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দিয়ে আসছে। টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন যে, আমি নীতিগত ভাবে স্টারলিংককে লাইসেন্স দিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) বলেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা শহর ও গ্রামের মানুষের জন্য সমানভাবে ইন্টারনেট সেবা দিতে চাই। এর মাধ্যমে প্রত্যান্ত অঞ্চল বিশেষ করে গ্রাম, চর ও দ্বীপগুলোর ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর পদ থেকে মোস্তাফা জব্বারের ইস্তফার পর বিভাগটির দায়িত্ব নিয়ে প্রতিমন্ত্রী পলক বিটিআরসির সঙ্গে প্রথম বৈঠক এই সিদ্ধান্তে কথা জানান।
STARLINK অনমোদন পেলে দেশে প্রচলিত টেলিযোগাযোগ ও কেবল ইন্টারনেট পরিষেবায় প্রতিযোগিতা বাড়বে। দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় সেসব অঞ্চরে স্যাটেলাইট-ভিত্তিক পরিষেবা দেওয়া সম্ভব। এটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষকে উচ্চগতির ইন্টারনেট দিয়ে তাদের ক্ষমতায়নে অবদান রাখার পাশপাশি এর মাধ্যমে শিক্ষা, অর্থনীতি ও ইন্টানেট যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে যেহেতু মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড ইতোমধ্যে দেশের প্রায় সব ছরিয়ে পড়েছে তাই স্টারলিংকের বাণিজ্যিক সাফল্য তুলনা মূলক ভাবে কম হওয়ার আশঙ্কা আছে।
STARLINK ইন্টানেটের দাম বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত বেশি। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, বেশিরভাগ জায়গায় এর পরিষেবা নিতে মাসে প্রায় ১২০ ডলার খরচ হয়। প্রথমদিকে, হার্ডওয়্যার খরচসহ তা ৫৯৯ ডলারে পৌঁছায়।
স্থানীয় আইএসপি থেকে পাঁচ এমবিপিএস ব্রডব্যান্ডের দাম প্রতি মাসে প্রায় ৫০০ টাকা ও মোবাইল ইন্টারনেটের দাম প্রতি ৩০ জিবিতে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পড়তে পারে।
এর আগে স্পেসএক্স বাংলাদেশে স্টারলিংক পরিষেবা চালুর ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং গত জুনে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা এ বিষয়ে একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর আগে, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেছেন, স্পেসএক্সের কর্মকর্তাদের পরিবেশনায় দেখা গেছে স্টারলিংকের ইন্টারনেট ও ডাউনলোড স্পিড ৫০০ এমবিপিএস। আইটি বিভাগের অপর এক পরিবেশনায় দেখা গেছে এর ডাউনলোডের গতি ১৫০ এমবিপিএস।
বিএসসিএল হলো পাঁচটি স্টারলিংক টার্মিনাল নিয়ে সেগুলো বৃষ্টি, কুয়াশা ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় স্টারলিংক কীভাবে কাজ করে তা বিশ্লেষণ করে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা এই বিশ্লেষণের ফলাফল দেখেছি। সেগুলো ভালোভাবে কাজ করেছে। এখন তাদের লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে হবে। লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা ছিল সরকারের বৈধ নজরদারি ব্যবস্থার অনুমোদন। বিষয়টি স্পেসএক্স কর্মকর্তাদের নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
দেশে এই আইনটির মাধ্যমে অপরাধমূলক কাজ পর্যক্ষেণের জন্য কয়েকটি সরকারি সংস্থাকে টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি নজরদারির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, আমরা স্টারলিংকে লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক। ইতোমধ্যে তাদের এই পরিষেবা পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছি। বৈধ নজরদারি আইন সম্পর্কে তিনি বলেন, লাইসেন্স দেওয়ার আঘে বিটিআরসি নিশ্চিত করবে যে এই আইনের অধীনে সব শর্ত পূরণকরা হয়েছে কিনা।
গত অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল। এর মধ্যে আছে এক কোটি ২৫ লাখ ব্রডব্যান্ড ইন্টানেট ও ১১ কোটি ৯৪ লাখ মোবাইল মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেরশর (আইএসপিএবি) সভাপতি এমদাদুল হক বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া আগে সব শেয়ার হোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ ব্লগের মাধ্যমে অনলাইনে কিভাবে টাকা আয় করবেন?
তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিষেবা বর্তমানে দেশের কয়েকটি দ্বীপ ছাড়া প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের প্রয়োজন কেন?
রবি আজিয়াটা লিমিটেড এর চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার বলেন স্টারলিংকের প্রবেশকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ফাইবার ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা যেসব এলাকায় নেই সেসব বলোকায় স্টারলিংকের মাধ্যমে পরিষেবা দেওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি, নিয়ন্ত্রক সংস্থা একই সেবার জন্য একই নিয়ম নীতিমালা নিশ্চেত করবে। এর মধ্যে প্রধিান ও করও অন্তর্ভূক্ত থাকবে। যা সব কোম্পানি সার্ভিস প্রোভাইডারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আমাদের যে কোনো নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানানো উচিত, উল্লেখ করে বিডিজবস এর প্রধান বলেন , এটি খুব ব্যয়বহুল। খুব কম মানুষই এটি ব্যবহারের সুযোগ পাবে। এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানাতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বর্তমানে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার দামের স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠান ৬০ টিরও বেশি দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পিরষেবা প্রদান করছে। এর মধ্যে চার হাজার ৫১৯ টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট কক্ষপথে বিরাজমান আছে। স্টারলিংকের ২০ লাখেরও অধিক গ্রাহক আছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের ইন্টারনেট পরিষেবা সব মহাদেশে পাওয়া যায়।
২০১৮ সালের ১১ মে প্রায় দুই হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা খরচ করে দেশের প্রথম ও একমাত্র স্যাটেইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেইট-১ মহাকাশে পাটানো হয়। গত সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের সংঙ্গে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট এর জন্য লেটার অব ইনটেন্ট সই করে বাংলাদেশ।
এলআইআরএন এশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাইদ খান বলেন, মানুষের টাকায় ও বাণিজ্যিক ঋণ নিয়ে বিএসসিএলের স্যাটেলাইট আসলেই ব্যর্থ হয়েছে, তাই বলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারকে এ বিষয়ে জবাব দিতে হবে যে তারা কোথায় ব্যর্থ হয়েছে।