একটি ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড কতটা ফাস্ট তা একটি ওয়েবসাইটের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমান সময়ে ওয়েবসাইটের পেজ গুলো ফাস্ট লোডিং হওয়াটা অনেক বেশি জরুরী কারণ এটি Google Ranking Factors এ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
যদি একটি ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড ফাস্ট থাকে তাহলে Google Search Ranking Page (SERP) এ ভালো করে র্যাংক করতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে ভালো User Experience প্রদান করে থাকে।
আবার ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড যদি স্লো হয়ে থাকে তাহলে আপনি যত ভালো আর্টিকেল লিখে থাকেন না কেন আপনার ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট বেড়ে যাবে। ফলে আপনার ওয়েবসাইটে গুগল থেকে ট্রাফিক পাওয়া সম্ভব হবে না। এতে করে আপনার ওয়েবসাইট অধিক ক্ষতি গ্রস্থ হতে পারে।
আর যদি আপনি একটি WordPress ওয়েবসাইট এর লোডিং স্পীড ফাস্ট করতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীডের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে ওয়েবসাইটের সফলতা। কারণ ওয়েবসাইটের পেজ গুলো কতটা ফাস্ট বা স্লো এটার উপর নির্ভর করে ওয়েবসাইটের পরিচয়ের উপর প্রভাব ফেলে। ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট, ভিউ, কোনভার্শন ইত্যাদি প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবার এগুলো থেকেও জরুরী বিষয় হলো পেজ স্পীড যেটি কিনা Google Ranking Factors এ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
অর্থাৎ গুগল তার সার্চ রেজাল্ট পেজে একটি ওয়েবসাইট র্যাংক করার সময় ওয়েবসাইটের মধ্যে কিছু বিশেষ গুন গুলো যাচাই করে Website র্যাংক করে থাকে।
যদি আপনি Google Search থেকে নিজের সাইটে অধিক পরিমান ট্রাফিক আনতে চান তাহলে ওয়েবসাইটের পেজ স্পীড নিয়ে শুরুতেই ভাবতে হবে। আপনার ওয়েবসাইট যদি অধিক ফাস্ট হয় তাহলে Google Search এ আপনার সাইটের র্যাংক ভালো অবস্থানে থাকবে। কারণ ফাস্ট লোডিং ওয়েবসাইটকে গুগল র্যাংক করার ক্ষেত্রে বেশি প্রধ্যান্য দিয়ে থাকে। আর আপনার ওয়েবসাইটি গুগল র্যাংক ভাল থাকার অর্থ হলো আপনার সাইটে প্রচুর অর্গানিক ট্রাফিক এবং ভিজিটরস পাবেন।
আবার যদি ওয়েবসাইটের লোডিং স্লো হয় তাহলে গুগল সার্চে আপনার ওয়েবসাইটের র্যাংকিং প্রচুর খারাপ হয়ে থাকবে। যার ফলে গুগল থেকে অর্গানিক ট্রাফিক বা ভিজিটর্স অনেকাংশে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুনঃ ওয়েবসাইট (Website) কি? ওয়েবসাইট কত প্রকার ও কি কি?
WordPress ওয়েবসাইট স্লো হওয়ার কারণ কি?
একটি ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড স্লো হওয়ার কারণ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। আমরা যখন বিভিন্ন ধরনের জনপ্রিয় অনলাইন টুলস ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড চেক করি তখন বিভিন্ন টেকনিক্যাল কারণ গুলোর বিষয়ে বলা হয় যেগুলো আমাদের সাইটকে স্লো করে থাকে। তবে বেশির ভাগ Technical Issue গুলো অনেক সহজেই সঠিক করে নেওয়া সম্ভব। আর আপনি যদি WordPress ব্যবহার করে নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকেন তাহলে Website Speed এর সাথে জড়িত Technical সমস্যা গুলোর সমাধান সহজেই করতে পারবেন।
যে সকল Technical সমস্যা গুলোর কারণে একটি ওয়েবসাইট স্লো হয়ে থাকে তার কারণ গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
- Web Hosting: একটি খারাপ হোস্টিং কোম্পানি থেকে হোস্টিং সুবিধা নেওয়ার ফলে আপনার ওয়েবসাইটের স্পীড প্রচুর স্লো হতে পারে।
- Page Size: আপনার ওয়েবসাইটের পেজ গুলো যদি সাইজ অনেক বেশি হয়ে থাকে তাহলে ওয়েবসাইটের লোডিং স্লো হতে পারে।
- External Scripts: একটি ওয়েবসাইটের ব্যাকগ্রাউন্ড এ বিভিন্ন ধরণের External Scripts ও Java Scripts লোড হয়। এই ধরণের Scripts গুলোর কারণে ওয়েবসাইট লোড হয়। আর এই ধরণের External Scripts ও Java Scripts গুলো যেকোনো ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড অনেক স্লো করে থাকে।
- Caching: একটি ওয়েবসাইটের দ্রুত লোডিং এর ক্ষেত্রে Caching এর ভূমিকা অনেক। ওয়েবসাইটে সঠিক ভাবে Caching এর প্রক্রিয়ার ব্যবহার না করলে সাইট প্রচুর স্লো করে ফেলে।
আরও পড়ুনঃ ক্যারিয়ার হিসেবে WordPress শেখার ভূমিকা
ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড ফাস্ট করার উপায়
যদি আপনি নিজের ওয়েবসাইট বা ব্লগে যত ভালো আর্টিকেল পাবলিশ করেন না কেন যদি আপনার ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড ফাস্ট না হয় তাহলে Google Search এ আপনার ওয়েবসাইটটি Rank করবে না। তাই এই আর্টিকেলে আপনাদেরকে শেয়ার করবো কিভাবে ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড ফাস্ট করা যায়।ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড ফাস্ট করার শুরুতে কিছু বিষয় আমাদের জেনে রাখা জরুরী।
Website Backup
ওয়েবসাইটের স্পীড অপ্টিমাইজেশন করার আগে অবশ্যই নিজের ওয়েবসাইটটি Backup করে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ যদি স্পীড অপ্টিমাইজেশ বা অন্যান্য Editing করার ক্ষেত্রে ভুল কিছু হয়ে গেলে যেন পূণরায় ওয়েবসাইটটি আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা যায়।
তাই ওয়েবসাইটের স্পীড অপ্টিমাইজেশ করার ক্ষেত্রে WordPress ওয়েবসাইট Editing করার শুরুতে সম্পূর্ণ ওয়েবসাইটটি Backup করে নিতে হবে। তাই WordPress ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ করে নেওয়ার জন্য কিছু জনপ্রিয় Plugin এর নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
Website Loading Speed Checkup
WordPress ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড অপ্টিমাইজেশন করার আগে ওয়েবসাইটের বর্তমান অবস্থা কি পর্যায়ে রয়েছে তা জানতে হবে। এতে করে অনুমান করা যাবে যে ওয়েবসাইটটির কি পরিমান অপ্টিমাইজেশন করতে হবে। ওয়েবসাইটের স্পীড চেক করার জন্য কিছু জনপ্রিয় Tools এর নাম নিচে উল্লেখ করা হলো যাতে করে আপনারা ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড চেক করতে পারেন।
১. Focus on Web Hosting
আমরা অনেকেই রয়েছি যারা অল্প টাকা দিয়ে Local ও Low quality Web Hosting ক্রয় করে থাকি। আর এসব Low quality Web Hosting এর ব্যবহার করার ফলে ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড স্লো হয়ে থাকে। একটি Low quality Web Hosting Server যেকোনো ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড প্রায় শতকরা ৬৫ ভাগ কমিয়ে দেয়। তাই আমাদের উচিত ভালো মানের Web Hosting ক্রয় করা। কিছু ভালো হোস্টিং কোমপানির নাম উল্লেখ করা হলো। যেমন, Bluehost, Hostinger, HostGator, InMotion Hosting, Fasthosts, A2 Hosting, InterServer, DreamHost, Cloudways, GoDaddy।
তাছাড়া ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড ফাস্ট করার ক্ষেত্রে Cloud Hosting Service ব্যবহার করা উচিত। আর Cloud Hosting হলো বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আধুনিক একটি সার্ভিস। যেকোনো ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড ফাস্ট করার ক্ষেত্রে Cloud Hosting Service বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. WordPress Theme Select
ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড ফাস্ট করার ক্ষেত্রে WordPress Theme Select গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড ঠিক রাখার জন্য খুব সাধারণ একটি WordPress Theme ব্যবহার করতে হবে। তাই যে সকল WordPress Theme এর লোডিং স্পীড ফাস্ট সেই সকল Theme আমাদের ব্যবহার করতে হবে।
WordPress Website এর জন্য কিছু জনপ্রিয় Theme রয়েছে যেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
- GeneratePress
- Astra
- Schema
- OceanWP ইত্যাদি
আর WordPress Theme গুলোর মধ্যে GeneratePress এবং Astra এই দুইটি থিম প্রচুর ফাস্ট ও ফ্রি।
৩. Use minimum Plugin
আপনার WordPress ওয়েবসাইটের সকল অপ্রয়োজনীয় Plugin গুলো Uninstall করতে হবে। কারণ ওয়েবসাইটে যত বেশি Plugin install করা হবে এবং Plugin এর সাথে জড়িত বিভিন্ন Scripts এবং requests গুলো বেকগ্রাউন্ডে প্রোসেস হতে থাকে। যার ফলে ওয়েবসাইট লোডিং হতে সময় তুলনামূলক বেশি লাগে। তাই ওয়েবসাইটের সকল অপ্রয়োজনীয় Plugin গুলো Uninstall করতে হবে। যার ফলে ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড বৃদ্ধি পাবে।
৪. Simple Website Design
আমাদের উচিত প্রত্যেক ওয়েবসাইট সিম্পল ডিজাইন করা এবং সব সময় ওয়েবসাইট নিট ও ক্লিন রাখা। ওয়েবসাইটে যত বেশি অপ্রয়োজনীয় ইমেইজ, ডিজাইন ইত্যাদি ব্যবহার করবেন, সেগুলো স্বাভাবিক ভাবে লোড হতে বেশি সময় নিবে। তাই ওয়েবসাইটের প্রয়োজন অতিরিক্ত কোনো ধরণের Image, Function বা Design ব্যবহার করা উচিত নয়।
৫. Compress Image Before Uploading
আমরা যখন একটি আর্টিকেল তৈরি করে থাকি তখন আমাদের বিভিন্ন Screenshot বা অন্যান্য Image ব্যবহার করতে হয়। আর এই Image বা Screenshot গুলোর সাইজ যত বেশি হবে, ততবেশি সময় নিয়ে লোড হবে। তাছাড়া অধিক বেশি সাইজের Image বা Screenshot ব্যবহারের ফলে ওয়েবসাইটের সাইজও বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ওয়েবসাইট লোড হতে অধিক সময় নিয়ে থাকে।
তাই আমাদের উচিতক নিজের ওয়েবসাইটে যেকোনো Image বা Screenshot আপলোড করার আগে, সেটি যেন Compress করে সাইজ কমিয়ে নেওয়া হয়। এতে করে আপনার ওয়েবসাইটের স্পীড ও পারফর্মেন্স দুটোই ঠিক থাকবে।
৬. Minify HTML, CSS & JavaScript
আমাদের নিজেদের ওয়েবসাইটের HTML, CSS এবং JavaScript গুলো Minify করে ওয়েবসাইটের স্পীড ও পারফর্মেন্স অনেকাংশে বৃদ্ধি কার যায়। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন WordPress Minification Plugin রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে HTML, CSS এবং JavaScript গুলো Minify করে নিতে পারবেন। যেমন- WP Rocket, Fast Velocity Minify, Autoptimize, Merge + Minify + Refresh, W3 Total Cache ইত্যাদি।
৭. Remove Query Strings from Static Resources
একটি ওয়েবসাইট স্লো হওয়ার পিছনে Query Strings বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ওয়েবসাইটের Caching, Speed এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে এই Query Strings গুলো। তাই ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড ফাস্ট করার জন্য Query Strings গুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। Query Strings remove করার জন্য কিছু Plugin রয়েছে যেমন- Autoptimize, Speed Booster Pack, Remove Query Strings from Static Resources এবং W3 Total Cache ইত্যাদি।
৮. Use CDN
একটি ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড ফাস্ট রাখার জন্য Content Delivery Network (CDN) এর ব্যবহার আবশ্যক। Content Delivery Network (CDN) এর ব্যবহারের ফলে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন Static Cache Image তৈরি করে CDN এর বিভিন্ন লোকেশনে থাকা সার্ভার গুলোতে সেভ করে রাখা হয়। ফলে যখন কোনে ভিজিটর্স আপনার ওয়েবসাইটের ডোমেইন নামটি সার্চ করবে, তখন সেই User Location এর সব থেকে কাছের CDN সার্ভার থেকে ওয়েব পেজটি শো করবে। আর এভাবে User এর সবচেয়ে কাছের সার্ভার থেকে ওয়েবসাইটটি Access করার ফলে, ওয়েবসাইটটি অনেক তাড়াতাড়ি লোড হবে।
আরও পড়ুনঃ টেকনিক্যাল এসইও গুরুত্ব
৯. Enable Caching
একটি ওয়েবসাইটের Caching Function অধিক প্রয়োজন লোডিং স্পীড ফাস্ট করার জন্য। ওয়েবসাইটের Caching Function এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটের একটি আলাদা Static HTML File তৈরি করে থাকে।
এই Static HTML File এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটের Image, File, Web documents, Multimedia এবং HTML Pages ইত্যাদি গুলো কিছু সময়ের জন্য সেভ হয়ে থাকে। যার ফলে ওয়েব ব্রাউজ করে ওয়েবসাইট ভিজিট করার সময় সম্পূর্ণ ডেটা গুলো বার বার ওয়েব ব্রাউজরে লোড হওয়ার প্রয়োজন হয় না। এতে করে Server Load এবং Server Request প্রচুর কম থাককে, তখন ওয়েব পেজ দ্রুত লোড হবে। ওয়েবসাইটের Caching Function চালু রাখার জন্য কিছু প্লাগিন রয়েছে যেগুলো হলো- WP Super Cache, WP Fastest Cache ইত্যাদি।
১০. Update PHP Version
প্রত্যেকটি ওয়েবসাইটে Update PHP Version ব্যবহার করা অনেক জরুরি। কারণ PHP Version যত আপডেট হবে তত নিত্য নতুন Version আসবে। তাই যে সকল ওয়েবসাইট Latest PHP Version এ Upgrade করেছে, সে সকল ওয়েবসাইটের পারফর্মেন্স, স্পীড ও সিকিউরিটি তুলনামূলক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। PHP Version Update করার জন্য আপনার হোস্টিংয়ের cPanel এ Login করার পর PHP Version Update করার অপশন দেখতে পাবেন।
১১. Lazy Load Image ব্যবহার
একটি ওয়েবসাইট বা ওয়েব পেজ এর লোডিং স্পীড স্লো হওয়ার মূল কারণ হলো Image। ওয়েবসাইটে যত বেশি Image থাকবে , তত বেশি সময় লাগবে পেজটি লোড হতে। তাই Lazy Load Image ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের লোডিং এর সময় কিছু পরিমানে কমিয়ে আনা সম্ভব।