Site icon Info IT BD

ব্লকচেইন মাইনিং কি? কিভাবে বিটকয়েন তৈরি হয়?


যেহেতু কাগজ প্রচলিত মুদ্রা তৈরির একমাত্র উপায়, তেমনি বিটকয়েন শুধু মাইনিং এর মাধ্যমে ভার্চুয়ালি তৈরি হয়ে থাকে। তবে একজন বিটকয়েন ব্যবহারকারী বিভিন্ন উপায়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি উপার্জন করতে পারেন। আর এই মাইনিং হচ্ছে বিটকয়েন তৈরির একমাত্র উৎস।

এখন আসা যাক মাইনিং আসলে কি এবং এই মাইনিং করে কিভাবে বিটকয়েন তৈরি হয় তার বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আজকের পোস্টিতে আলোচনা করবো।

ব্লকচেইন মাইনিং কি? কিভাবে বিটকয়েন তৈরি হয়?

বিটকয়েন মাইনিং এর ব্যাপারে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি সামনে আসে তা হল মাইনিং। কেন এই কাজটি মাইনিং বলা হয়- মূলত স্বর্ণখনি থেকে মাটি খুঁড়ে স্বর্ণ তুলে আনার মতোই কঠিন কাজ বলে বিটকয়েন মাইনিং নাম করণ করা হয়।

বিটকয়েন মাইনিং যে করে থাকে তাকে বিটমাইনার বলা হয়ে থাকে। আর এই মাইনার একটি বিশেষায়িত হার্ডওয়্যারে চালানো কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে মাইনিং করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ জনপ্রিয় কিছু মুভি ডাউনলোড করার ওয়েবসাইট ২০২৪

মাইনিং সম্পর্কে জানার আগে গাণিতিক ফাংশন (হ্যাশ ফাংশন) জানা প্রয়োজন। হ্যাশ ফাংশন হচ্ছে যেটি কোন একটা ইনপুট নিয়ে আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ একটা আউটপুট দেবে। কিন্তু আউটপুট থেকে ইনপুন বের করা কঠিন, অনেক ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব এবং একই ইনপুটের বিপরীতে প্রতিবারই একই আউটপুট আসবে।

যেমন- p এর ওপর যদি ফাংশনটি প্রয়োগ করলে hash(p)=q। এখানে q এর অর্থ জানা থাকলেও p এর অর্থ অজানা। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে p এর অর্থ জানা অসম্ভব। p এর মান পরিবর্তন না হলে hash(p) সর্বদা q থাকবে। তবে ভালো হ্যাশ ফাংশনের ক্ষেত্রে p ও q এর পৃথক পৃথক মান বহন করে অর্থাৎ ইউনিক হয়।

বিটকয়েন মাইনিং হ্যাশ ফাংশন SHA-256 ব্যবহার করা হয়। SHA (Secure Hash Algorithm) যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) এর ডিজাইন করা এই হ্যাশ ফাংশনটি ২০০১ সালে প্রথম প্রকাশ করা হয়। নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরি এই ব্যবস্থাটি নষ্ট কার সম্পূর্ণটাই অসম্ভব।

আরও পড়ুনঃ বিটকয়েন (Bitcoin) কি ও কিভাবে কাজ করে?

তত্ত্ব অনুযায়ী একটা বার্তাকে হ্যাশ করে এনক্রিপ্ট করলে তার ফলাফল হবে n পরিমান বিট (কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর ভাষায় বিল হলো ০ ও ১) ব্রুট ফোর্স পদ্ধতি অনুযায়ী- খুঁজে বের করা ঐ এনক্রিপ্টে বার্তার করেস্পন্ডিং বার্তার 2^n ধাপ থাকবে। আবার বার্থডে অ্যাটাক মেথডেও দুটো বার্তা খুঁজে বের করা যায়, যার ফলাফলও n পরিমাণ বিট। তবে তাতে প্রয়োজন হবে 2^(n/2) খানা ধাপ। এখানে n যত বড় হবে বিষয়টি তত বেশি জটিল বা কঠিন হবে। SHA-256 এই ফাংশটি গণনা করা হয় ৩২ বা ৬৪ বিট ওয়ার্ড দিয়ে।

কম্পিউটার বিজ্ঞানে অনেক সমস্যা সমাধান করার জন্য উপযুক্ত কোন এ্যালগরিদম নেই। সেই ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য সম্ভাব্য অনান্য বিষয়াদি নিয়ে প্রত্যাশিত সমাধান পাওয়া পর্যন্ত কাজ করে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ব্রুট ফোর্স মেথড।

বিটকয়েন মাইনিং এর ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে, কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমের কঠিন গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে বিটকয়েন তৈরি করা হয়। মূলত এই SHA-256 ফাংশন ব্যবহার করে একটা একটা করে ব্লক জুড়ে একটা ব্লকচেইন তৈরি করা হয়। এগুলির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কোনো একটা ব্লক দেখে তার আগের ব্লকটাকে উল্টোপথে তৈরি অসম্ভব এবং এই ব্লকচেইন সম্পূর্ণরূপে যাচাই করা সম্ভব। কারণ একটা ইনপুট থেকে একটার বেশি আউটপুট তৈরি হবে না।

আরও পড়ুনঃ NFC কি? NFC কিভাবে কাজ করে?

এবার চলুন পরীক্ষা করে দেখা যাক SHA-256 hash calculator https://xorbin.com/tools/sha256-hash-calculator এই লিংকে ক্লিক করুন। তারপর এই লিখাটি লিখুন- pay me, joe, 10 bitcoins. 000001। তারপর Calculator SHA256 hash লিখা বাটনে ক্লিক করুন। এতে করে দেখা যাবে বিশাল একটি হেক্সাডেসিমাল সংখ্যা- 71cc7a9ab85130……7314ba0d5201e।

এই কাজটি যে কেউ করতে পারবে। তবে মাইনিং করার ক্ষেত্রে ঐ কাজটি গ্রহণযোগ্য হয়, যেটি খুব কমই পাওয়া যায়। আর এই কাজটি তখনই শুরু হবে যখন এই সংখ্যাটি 0 দিয়ে শুরু হবে। 000001 সংখ্যার 1 কে পরিবর্তন করতে শুরু করেন, 2, 3, 4,…. এইভাবে করে সংখ্যাটি পরিবর্তন করতে থাকেন। যখন 13 লিখবেন, ফলাফলে তখন জেনারেটেড স্ট্রিং শুরু হচ্ছে 0 দিয়ে। এইবার সামনে আসছে Scarcity এবং কাজের প্রমাণ (proof-of-work) অর্থাৎ যার মাধ্যমে এই কাজটি করা হয়েছে এটি তার প্রমান। বিটমাইনাররা নিশ্চয় pay me, joe এসব কিছু ব্যবহার করবে না। তারা ব্যবহার করবে কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং কোড, নেটওয়ার্কে ঠিকানা।

সর্বশেষে, যে স্ট্রিংটা আসবে এটা দেখে ভিতরে কি তথ্য আছে সেটা বের করা অসম্ভব। অর্থাৎ এই সংখ্যাটি তৈরি করতে গিয়ে কম্পিউটার নিজে থেকে কিছু কাজ করেছে। এটি সহজ মনে হতে পারে কিন্তু এটি সহজ কোন বিষয় নয়।

১৪ টি শূণ্য দিয়ে সংখ্যাটি তৈরি মুহূর্তের মধ্যে পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্কের বাকি কম্পিউটারে ওই সংখ্যার ইনপুট পৌছে যায়। এবং অন্যান্য ব্যবহারকারীরা আউটপুট যাচাই করে একে অন্যকে রিলে করে। এভাবে রিলে হতে হতে পুরো নেটওয়ার্কে ব্যবহার হতে থাকে। আর আউটপুট তৈরিকারককে পুরুস্কার স্বরূপ ২৫ টি বিটকয়েন মুদ্রা দেওয়া হয়। আর কেউ joe কে bob এ পরিবর্তন করতে পারবে না, করলে সম্পূর্ণ হ্যাশ আউটপুটটি পরিবর্তন হয়ে যাবে।

ঠিক এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী সব বিটমাইনার এক যোগে সেকেন্ডে প্রতি ৩০ ট্রিলিয়ন বার চেষ্টা করে প্রতি দশ মিনিটে একটা করে আউটপুট তৈরি বের করতে পারে, যে কিনা ২৫ টি বিটকয়েন পুরুষ্কার পায়।

আর মাইনিং এর ব্যাপারটি এত কঠিন কেন? কারণ ডিফিকাল্ট লেভেলটি নির্ধারিত গোটা নেটওয়ার্কের আওতায় থাকা সব বিটকয়েন ব্যবহারকারীদের নিয়ে। প্রত্যেক মাইনার নিজে থেকে গণনা বা অনুমান করে সে কতোটা ডিফিকাল্টি অফ সল্যুশন গ্রহণ করবে এবং নেটওয়ার্কজুড়ে রিলে করবে।

Info IT BD সকল আপডেট পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেলে

Exit mobile version