অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট খোলার সঠিক নিয়ম

আনলাইনে টিন সার্টিফিকেট খোলার সঠিক নিয়ম
 
বর্তমানে টিন সার্টিফিকেট এর ব্যবহার অনেক আংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য টিআইএন বা টিন সার্টিফিকেট অতি প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে শুরু করে ব্যাংক লোন বা সরকারি বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা নিতে বা কর পরিশোধ করতে টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে সবকিছু অনলাইন ভিত্তিক করা হয়। যে অনুযায়ী TIN Certificate তৈরি করা যায় খুব সহজে। আমাদের দেশের নাগরিকগনের আয়কর নিবন্ধন বা TIN Certificate করা থাকলে তারা বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। একজন ব্যক্তি কেবল মাত্র একটি TIN Certificate বা আয়কর নিবন্ধন করতে পারবেন। একজন ব্যক্তির নামে একাধিক টিন সার্টিফিকেট করা সম্ভব নয়।
তাছাড়া আয়কর নিবন্ধন বা টিন সার্টিফিকেট একবার করা হয়ে গেলে যে কোন সময় নির্ধারিত ওয়েবসাইট থেকে লগইন এর মাধ্যমে আয়কর নিবন্ধন বা টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করা যায়। এখানে ব্যক্তিগত ভাবে বা কোন কোম্পানির নামে কিভাবে আয়কর নিবন্ধন বা TIN Certificate করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার আগে চলুন জেনে আসি টিন সার্টিফিকেট বলকে কি বুঝায়?

টিন সার্টিফিকেট বলতে কি বুঝায়?

টিআইএন (TIN) এর পূর্ণরূপ হলোট্যাক্সপেয়ার আইডেনটিফিকেশন নাম্বার ১২ ডিজিটের এই নাম্বারটি হলো একটি বিশেষ নাম্বার যার মাধ্যমে করদাতাকে সহজে শনাক্ত করা যায়।মূলত টিন সার্টিফিকেটে করদাতা আয়কর শনাক্তকরন নম্বরটি বহন করে থাকে। সবশেষে বলা যায় আয়কর শনাক্তকরন নাম্বারটির জন্য যে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়ে থাকে তা মূলত একজন করদাতার পরিচয়পত্র। আর এই পরিচয় পত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার করদাতা শনাক্ত করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ আয়কর রিটার্ন কি? আয়কর রিটার্ন দাখিল কাদের করতে হবে?

টিন সার্টিফিকেট কেন করা হয়ে থাকে?

একজন করদাতার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ দ্রুত করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করার পদ্ধতি চালু করেছে। বর্তমানে TIN Certificate করা থাকলে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। বর্তমানে ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে শুরু করে ব্যাংক লোন বা সরকারি বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা নেওয়া জন্য TIN Certificate প্রয়োজন। তাছাড়া বাংলাদেশে নাগরিক যদি কোন ব্যবসায় শুরু করতে চায় তার জন্য TIN Certificate আবশ্যক।

আবার বাড়ি তৈরি করার জন্য রাজুক থেকে অনুমতি পত্রের প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রেও টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। যদি কোন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠাণ সরকারি কাজ পাওয়ার জন্য আবেদন করে এবং এই আবেদনপত্র যাচাই করার সময় টিন সার্টিফিকেট বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে কোন ব্যক্তি যদি জাতীয় সঞ্চয়পত্র বা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে চায় সেক্ষেত্রে আবেদনের সাথে টিন সার্টিফিকেট জমা প্রদান করতে হয়।

টিন সার্টিফিকেট কখন করতে হবে?

যদি আপনার বার্ষিক আয় ৩৫০,০০০ টাকার বেশি হয়, তাহলেই আপনাকে আয়কর দিতে হবে। আর আয়কর প্রদান করার জন্য আপনাকে টিন সার্টিফিকেট করে নিতে হবে। অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট করার জন্য যে সকল কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

. জাতীয় পরিচয়পত্র

. নিবন্ধিত মোবাইল নাম্বার

. কোম্পানীর ক্ষেত্রে আরজেএসসি নাম্বার

মূলত এই তথ্যগুলো টিন সার্টিফিকেট বা আয়কর নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজন হয়।

আনলাইনে টিন সার্টিফিকেট খোলার সঠিক নিয়ম:

অনলাইনে বর্তমানে টিন রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে টিন সার্টিফিকেট পেতে পারেন। টিন রেজিষ্ট্রেশনের জন্য প্রথমে আমাদেরকে উল্লেখিত লিংকটিতে প্রবেশ করতে হবে।

 TIN Registration Form

তারপর যথাক্রমে স্টার মার্ক গুলো পূরণ করতে হবে। এতে করে আপনি e-TIN সাইটটিতে নিবন্ধিত হয়ে যাবেন। তারপর সাইটটিতে পূনরায় লগইন করে প্রবেশ করুন। এরপর New Registration Selection করুন। Taxpayer’s Status/করদাতার ধরন a)* এখান থেকে করদাতা তাদের নিজ নিজ ধরন সিলেক্ট করতে পারবেন।

TIN Registration Form

Individual>Bangladeshi Resident (with NID): যে সকল করদাতা বাংলাদেশি, যাদের NID আছে এবং যাদের আয়ের প্রধান উৎস ব্যবসায়, বেতন, পেশাগত, বাড়ি ভাড়া ইত্যাদি সেকল করদাতারা এই অপশন সিলেক্ট করবেন।

b)*এই অপশন থেকে একজন করদাতা Major বা Minor সিলেক্ট করতে পারবেন অর্থাৎ যে সকল করদাতার বয়স ১৮ বছরের বেশি সে সকল করদাতা Individual>Bangladeshi>Major (with NID) এবং যে সকল করদাতার বয়স ১৮ বছরের কম সে সকল করদাতা Individual>Bangladeshi>Minor সিলেক্ট করবেন।

TIN Registration Form

Registration Type/রেজিস্ট্রেশন ধরন: এই অপশন থেকে একজন করদাতা কি ধরনের রেজিস্ট্রেশন করবেন তা সিলেক্ট করবেন। এখানে করদাতা New Registration করবেন না Re-Registration করবেন তা এই অপশন থেকে সিলেক্ট করবেন।

TIN Registration Form

·  Re-Registration: যে সকল করদাতার বর্তমানে 10 digit TIN রয়েছে সে সকল করদাতা অনলাইনে 12 digit TIN নিতে হলে Re-Registration সিলেক্ট করতে হবে।

·  New Registration: যে সকল করদাতা আগে কখনো TIN করেননি সে সকল করদাতা অনলাইনে 12 digit TIN নিতে এই অপশনটি সিলেক্ট করবেন।

Main Source of Income/আয়ের উৎস: এই অপশনে করদাতা তার আয়ের উৎস সিলেক্ট করবেন।

TIN Registration Form

·   Service: যে সকল করদাতার আয়ের উৎস বেতন তারা এটি সিলেক্ট করবেন।

· Profession: যে সকল করদাতার আয়ের উৎস পেশাগত যেমনআইনজীবী, ডাক্তার, প্রকৌশলী তারা এটি সিলেক্ট করবেন।

·   Business: যে সকল করদাতার আয়ের উৎস ব্যবসায় তারা এটি সিলেক্ট করবেন।

·  Others: যে সকল করদাতার আয়ের উৎস Profession/Business এর কোনটি নয় সে সকল করদাতা এটি সিলেক্ট করবেন। করদাতা তার আয়ের উৎস Service সিলেক্ট করলে যে অপশন গুলো পাবেন তা হল Service location, Type of Employer/Service location

TIN Registration Form

·     Service location: অপশন থেকে একজন করদাতা ৬৪ টি জেলার লিস্ট পাবেন এবং এখান থেকে করদাতা তার Service location সিলেক্ট করবেন।

TIN Registration Form

·    Employer Type: অপশন থেকে একজন করদাতা তার Type of Employer কি তা সিলেক্ট করতে পারবেন।

·  Selection এর কাজ শেষ করার পর পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য Go to Next বাটন ক্লিক করতে হবে।

Basic Information: এখানে একজন করদাতা তার সকল তথ্য প্রদান করবেন,যেমন: করদাতার নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বার ইত্যাদি। তথ্যগুলো করদাতার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী হতে হবে।

TIN Registration Form

Name of Taxpayer/করদাতার নাম:

·       Gender/লিঙ্গ:

·       Taxpayer’s National ID/জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বার:

·       Date of Birth/জন্ম তারিখ:

·       Father’s Name/পিতার নাম:

·       Mother’s Name/মাতার নাম:

·       Name of Spouse/স্বামী বা স্ত্রীর নাম:

·       Mobile Number/ফোন নম্বার:

·       Facsimile/ফ্যাক্স:

·       Email/ইমেইল:

Address Information: এখানে করদাতা তার বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা এবং চাইলে অন্যকোন ঠিকানা প্রদান করতে পারবেন।

TIN Registration Form

·   Current Address: এখানে করদাতার বর্তমান ঠিকানা এবং জেলার নাম প্রদান করবে এবং করদাতা চাইলে থানার নাম পোস্ট কোড যুক্ত করতে পারবে।

·  Present Address: এখানে করদাতার স্থায়ী ঠিকানা এবং জেলার নাম প্রদান করবে এবং করদাতা চাইলে থানার নাম পোস্ট কোড যুক্ত করতে পারবে। যদি করদাতার বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা একই হয় সেক্ষেত্রে বর্তমান ঠিকানা প্রদান করার পর চেক বক্সে ক্লিক করলেই স্থায়ী ঠিকানা লিখার দরকার হবে না।

·   Other Address: করদাতা চাইলে বর্তমান ঠিকানা স্থায়ী ঠিকানা ছাড়া অন্য কোন ঠিকানা এখানে প্রদান করতে পারবেন। Address Information প্রদান করার পর পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য Go to Next বাটন ক্লিক করতে হবে এবং পূর্ববর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য Back to Previous বাটন ক্লিক করতে হবে।

Final Review: করদাতা যে সকল তথ্য প্রদান করেছেন সেগুলো এই অপশন থেকে সর্বশেষ যাচাই করতে পারবেন এবং কোন তথ্য পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারবেন।

TIN Registration Form
 
 

*কোন তথ্য ভুল দেখতে পেলে তা শুদ্ধ করার জন্য  Back to Previous বাটন ক্লিক করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে পারবে।

*যদি কোন তথ্য ভুল না হয় সেক্ষেত্রে করদাতাকে নিম্নে দেখানো চিত্রের ন্যায় Disclaimer ক্লিক করতে হবে।

TIN Registration Form

এবং Submit Application বটনে ক্লিক করতে হবে। তাহলেই করদাতার জন্য TIN নাম্বার এবং সার্টিফিকেট তৈরি হবে। তারপর টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট দেখাবে এবং প্রিন্ট করতে হলে View Certificate বাটন ক্লিক করতে হবে, তারপর ডাউনলোড করা যাবে।

Info IT BD সকল আপডেট পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেলে

পরিশেষে বলা যায়,আয়কর পরিশোধ করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব কর্তব্য। যেহেতু আমাদের বাংলাদেশের আয়কর ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড হওয়ার কারনে আমরা খুব সহজে ঘরে বসে টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট তৈরি করতে পারবেন।

2 thoughts on “অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট খোলার সঠিক নিয়ম”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top